গ্যাস সংকট, তবুও চালু হতে যাচ্ছে গ্যাসচালিত আরও ২ বিদ্যুৎকেন্দ্র
২০০৯ সাল থেকে ১১৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে পরিমাণ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পরিশোধ করা হয়েছে, সেই অর্থ দিয়ে অন্তত তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত।
দেশে বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট চলতি বছর আরও বাড়তে যাচ্ছে।
চলমান গ্যাস সংকটের কারণে যখন দেশের দুই-তৃতীয়াংশ গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন করতে পারছে না, তখনই দুই হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার অন্তত আরও পাঁচটি গ্যাসচালিত কেন্দ্র এই বছর বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করবে।
কমার্শিয়াল অপারেশন ডেট (সিওডি) অনুমোদন পেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করুক বা না করুক ন্যূনতম পেমেন্ট পাবে, যা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নামে পরিচিত।
পাঁচটি কেন্দ্রের মধ্যে দুটিকে চলতি মাসে সিওডি দেওয়া হবে। চালু হলে এই কেন্দ্রগুলোও উৎপাদন না করলেও নিয়মিত তাদের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হবে—যা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
২০০৯ সাল থেকে ১১৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে পরিমাণ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পরিশোধ করা হয়েছে, সেই অর্থ দিয়ে অন্তত তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর সংসদে জানিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত তিন মেয়াদে ৮২টি স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র (আইপিপি) এবং ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ ও রেন্টাল পেমেন্ট বাবদ কমপক্ষে এক লাখ চার হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
আরো পড়ুন
চবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ
রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ ক্রয়কারী সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেকোনো দিন ৫৮৪ মেগাওয়াটের ইউনিক মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ৫৮৩ মেগাওয়াটের সামিট মেঘনাঘাট-২ বিদ্যুৎকেন্দ্র সিওডি পাবে।
এই দুটি কেন্দ্রের কাছেই ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ার ও জাপানের জেইআরএ ৭১৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। সেটিও শিগগিরই সিওডি পাবে।
নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটের তিনটি কেন্দ্র ২০২২ সালের মধ্যে উৎপাদনের যাওয়ার শর্তে ২০১৯ সালে অনুমোদন পায়। এই তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমন্বিত উৎপাদনক্ষমতা এক হাজর ৮৮৫ মেগাওয়াট। এই তিন কেন্দ্রের জায়গায় এক সময় মাছ ও ধান চাষ হতো।
এই তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও পিডিবির আরও দুইটি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘোড়াশাল রিপাওয়ারিং স্টেশন ইউনিট ৩ ও ৪ নির্মাণাধীন রয়েছে। পিডিবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে একটি কেন্দ্রের ৯৭ শতাংশ ও আরেকটির ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বর্তমানে দেশের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াটের ১০ হাজার ৭১২ মেগাওয়াটই আসে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। এসব কেন্দ্রে জন্য দৈনিক গ্যাসের চাহিদা এক হাজার ৯৬৯ মিলিয়ন ঘনফুট।
স্বাভাবিক সময়ে গ্যাস সরবরাহকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থা পেট্রোবাংলা মোট সাড়ে তিন হাজার এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করে, যার মধ্যে এক হাজার এমএমসিএফডি সরবরাহ করে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে। কিন্তু বর্তমানে পেট্রোবাংলার মোট সরবরাহ দুই হাজার ৫০০ এমএমসিএফডি, যার মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পাচ্ছে ৭০০ এমএমসিএফডি।
জ্বালানির মধ্যে গ্যাস তুলনামূলক সস্তা হলেও গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাড়ে নয় হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার উৎপাদনক্ষমতার বিরপীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার মেগাওয়াট।
পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে গিয়ে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। নতুন গ্যাসকূপ খনন ও দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানি চুক্তির কারণে সেই সময় গিয়ে তা বাড়বে।
এমন পরিস্থিতিতে মেঘনাঘাটের গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৩২২ এমএমসিএফডি গ্যাস কোথা থেকে আসবে, তা স্পষ্ট নয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার ও তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নতুন গ্যাস সরবরাহ কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, জানতে চাইলে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, 'গ্যাস সরবরাহ কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আমাদের এখনো কোনো পরিকল্পনা নেই।'
জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ পাবে বলে বিশ্বাস কেন্দ্রের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা অনুপম হায়াতের।
তিনি বলেন, 'আমাদের কেন্দ্রটি ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত দক্ষতা নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যেখানে বেসরকারি ও সরকারি মালিকানাধীন অন্যান্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ দক্ষতায় কাজ করে। অর্থাৎ একই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে আমরা অন্যদের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারব এবং আমাদের ইউনিট খরচও কম হবে।'


إرسال تعليق